Job News

বিদ্যুৎ পরিবাহী ও অপরিবাহী পদার্থ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

প্রিয় শিক্ষার্থী এখন যে বিষয় নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো তা হলো- বিদ্যুৎ পরিবাহী ও অপরিবাহী পদার্থ (Electrically conductive and non-conductive substances)

 বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থ: যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ খুব সহজেই হয়, বিশেষ কোনাে বাধার সম্মুখীন হয় না তাকে বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থ বা সুপরিবাহী পদার্থ বা কন্ডাক্টর বা পরিবাহক বলে। সাধারণত সৰ ধাতু তড়িৎবাহী। তন্মধ্যে রূপা, তামা, অ্যালুমিনিয়াম বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। ধাতব পদার্থ ছাড়া মাটি, প্রাণীদেহ, কার্বন, কয়লা পরিবাহকের কাজ করে।

 বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থের বৈশিষ্ট্য বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থের গুণাগুণ বা বৈশিষ্ট্য নিম্নে দেয়া হলাে –
(ক) নিম্নমানের আপেক্ষিক রেজিস্ট্যান্স থাকতে হবে।
(খ) নিম্নমানের তাপমাত্রা সহগ হতে হবে।
(গ) ক্ষয়রােধক ক্ষমতা বা স্থায়িত্ব হতে হবে।
(ঘ) যান্ত্রিক টান সহন ক্ষমতা বেশি থাকতে হবে।
(ঙ) নমনীয়তাসম্পন্ন গুণ থাকতে হবে।
(চ) মরিচা প্রতিরােধ ক্ষমতা থাকতে হবে।
(ছ) সােল্ডারিং করার উপযুক্ততা থাকতে হবে।

বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থের তালিকা:

বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থের তালিকা নিম্নরূপ —

NOTS-Conductor.jpg

বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থের ব্যবহার:
বিদ্যুৎ পরিবাহী পদার্থের ব্যবহার নিমে দেয়া হলাে। যথা –

(ক) রূপা: রূপার দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় এর ব্যবহার খুব কম হয়। প্রধানত ওয়াট-আওয়ার মিটারের স্যুটেটরে, কার্টিজ ফিউজ ও কিছু কিছু বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির কনডাক্টে রূপা ব্যবহার করা হয়।

(খ) তামা: মােটর রি-ওয়াইন্ডিংয়ে সুপার এনামেল কপার ওয়্যার, বৈদ্যুতিক ক্যাবল, জেনারেটরের কম্যুটেটর এবং ওভারহেড লাইনে তামার তার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

(গ) অ্যালুমিনিয়ামঃ তামার তারের তুলনায় দামে সস্তা বলে বর্তমানে ওভারহেড লাইনে ও ভূ-নিমস্থ ক্যাবল লাইনে অ্যালুমিনিয়ামের তার ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

(ঘ) সীসা: ক্যাবলের আবরণ, ফিউজ তার, ব্যাটারির প্লেট ইত্যাদি তৈরিতে সীসা ব্যবহার করা হয়।

(ঙ) পারদ: অ্যাম্পিয়ার আওয়ার মিটার, মার্কারি ভ্যাপার ল্যাম্প, মার্কারি আর্ক রেক্টিফায়ার ও রিলের ভিতরে পারদের ব্যবহার দেখা যায়।

(চ) লৌহ ও স্টীলঃ লােহা ও স্টীলের ব্যবহার সীমাবদ্ধ। তবে এটি সাহায্যকারী কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে।

বিদ্যুৎ অপরিবাহী পদার্থ :
যে সকল পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ সহজে চলাচল করতে পারে না, প্রবাহ পথে প্রচুর বাধার সম্মুখীন হয় তাকে বিদ্যুৎ অপরিবাহী পদার্থ বা কু-পরিবাহী পদার্থ বা অন্তরক বা ইসুলেটর বলে। অপরিবাহী পদার্থের মধ্যে তড়িপ্রবাহ তুলনামূলকভাবে খুব কম হয়, যাকে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে উপেক্ষা করা চলে। শুল্ক বায়ু, শুকনাে কাপড়, কাচ,শুকনাে কাঠ, রাবার, কাগজ, এবােনাইট, ব্যাকেলাইট ইত্যাদি অপরিবাহী পদার্থ অন্তরকের কাজ করে। মধ্যে কাঠ, কাগজ ও কাপড় ভিজে গেলে আবার পরিবাহকের কাজ করে।

বিদ্যুৎ অপরিবাহী পদার্থের বৈশিষ্ট্য:
অপরিবাহী পদার্থের গুণাগুণ বা বৈশিষ্ট্য নিম্নে দেয়া হলাে –
(ক) উচ্চমানের ইনসুলেশন রেজিস্ট্যান্স;
(খ) ক্ষয়রােধক ক্ষমতা বা স্থায়িত্ব
(গ) উচ্চমানের ডাই-ইলেকট্রিক ক্ষমতা;
(ঘ) যান্ত্রিক ক্ষমতা;
(ঙ) বাতাসে আর্দ্রতা শােষণে অক্ষমতা;
(চ) মরিচা প্রতিরােধ ক্ষমতা।

বিদ্যুৎ অপরিবাহী পদার্থের তালিকা বিদ্যুৎ অপরিবাহী পদার্থের তালিকা নিম্নরূপ –

 NOTS-Non-Conductor-01.jpg

 বিদ্যুৎ অপরিবাহী পদার্থের ব্যবহার:
বিভিন্ন প্রকার বিদ্যুৎ অপরিবাহী পদার্থের ব্যবহার নিয়ে দেয়া হলাে। যথা –
(ক) অ্যাসবেসটঃ এটি একটি সাদা রংয়ের আঁশযুক্ত অদাহ্য খনিজ পদার্থ। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে এর ইন্সুলেট করার ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ার জন্য উত্তাপক বস্তুসামগ্রীতে এটি ব্যবহৃত হয়।

(খ) মাইকা: এর ডাই-ইলেক্ট্রিক ক্ষমতা খুব বেশি। এটি অদাহ্য বস্তু হওয়ায় উত্তাপক বস্তুসামগ্রীতে ইস্যুলেশনের কাজে এর ব্যবহার হয়। যথা: হীটার, হট-প্লেট, ইন্ত্রি, ডায়নামাে ও মােটরের কম্যুটেটরে ইস্যুলেশন হিসেবে
ব্যবহৃত হয়।

(গ) কাচ: সাধারণভাবে কাচ একটি ভালাে অপরিবাহী পদার্থ। বাহু ও বাতির খােলের জন্য কাচ বেশি ব্যবহৃত হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনেও অনেক সময় কাচের ইলেটর ব্যবহার করা হয়।

(ঘ) ব্যাকেলাইট: ব্যাকেলাইট একটি যৌগিক, অন্তরক ও দাহ্য পদার্থ। উত্তাপক বস্তুসামগ্রীর ইস্যুলেশনের কাজে ব্যবহার করা যায় না। কারণ, অতিরিক্ত চাপে ব্যাকেলাইট বেকে যায়। ব্যাকেলাইট সাধারণতঃ সিলিং রােজ, সুইচের কভার ও সুইচবােদ্ভেৱ ঢাকনার জন্যই ব্যবহৃত হয়।

(ঙ) চীনামাটি: ওভারহেড লাইনের বিভিন্ন ধরনের ইলেট, সুইচ, ফিউজ, কাট আউট, টু-পিন ও থ্রী-পিন সকেটের বেইস হিসেবে চীনামাটি ব্যবহার করা হয়।

(চ) পাের্সলেনঃ তড়িৎ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অন্তরক বা ইলেটর হিসেবে পাের্সিলেনের ব্যবহার সর্বাধিক। এছাড়া ওভারহেড লাইনের ইলুলেটর, ক্লীট, সুইচ ও ফিউজ, হােল্ডারের বেস হিসেবে পাের্সিলেন ব্যবহৃত হয়।
(ছ) কাগজ: তেল অনুষিক্ত কাগজ সাধারণত ডায়নামাে, মােটর, পাখার আর্মেচার সুটে ব্যবহার করা হয়।

(জ) তেল: তেল ইস্যুলেশন হিসেবে ভালাে কাজ করে। তাই ট্রান্সফরমার, সার্কিট ব্রেকার ও হাই-ভােল্টেজ ক্যাবলকে ঠাণ্ডা রাখার জন্য ইস্যুলেশন হিসেবে তেল ব্যবহার করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!