Job News
NOTS-Electrical House Wiring
NOTS-Electrical House Wiring

বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং এবং হাউজ ওয়্যারিং বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা

এই পোষ্টে বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং এবং হাউজ ওয়্যারিং বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা (Detailed of electrical house wiring) করবো। এই পোষ্ট টি পড়লে আপনি বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং বা হাউজ ওয়্যারিং বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন এবং নিজেই ওয়্যারিং করতে পারবেন। তো চলুন শুরু করা যাক- বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং এবং হাউজ ওয়্যারিং বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা (Detailed of electrical house wiring)

বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং (Electrical wiring):

ব্যবহারকারীর মিটারবোর্ড হতে ব্যবহার করার স্থান বা লােড পর্যন্ত বিদ্যুৎ পরিবহন ব্যবহার এবং নিয়ন্ত্রণের সুষ্ট ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাকে ওয়্যারিং বলা হয়। বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং অভ্যন্তরীণ কিংবা বাহ্যিক ইলেকট্রিফিকেশনের অন্তর্ভুক্ত কাজ। ওয়্যারিং এর অর্থ বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের সুশৃঙ্খল লে-আউট।

অর্থাৎ, বৈদ্যুতিক লোডসমূহকে সাপ্লাইয়ের পথে সঠিক পদ্ধতিতে এবং বৈদ্যুতিক বিধি অনুযায়ী সংযোগ করা হয়। সঠিক পদ্ধতি এবং বৈদ্যুতিক বিধি অনুযায়ী প্রােটেকটিভ ডিভাইস ও কন্ট্রোলিং ডিভাইসের সমন্বয়ে তারকে সুষ্ঠ ও নিরাপদ বৈদ্যুতিক লোডে কারেন্ট সরবরাহের নিমিত্তে বা প্রয়ােজনে তারের বিন্যাসকে ওয়্যারিং বলে।

ওয়্যারিং এর বিভিন্ন অংশগুলাে নিম্নরূপ:
(ক) সার্ভিস সুইচ বা মেইন সুইচ
(খ) ডিস্ট্রিবিউশন বাের্ড বা ডিবি
(গ) সাব-ফিডার
(ঘ) সাব-ডিস্ট্রিবিউশন বাের্ড বা এসডিবি।
(ঙ) ফাইনাল সাব-সার্কিট বা লােড সার্কিট।

NOTS-Electrical House Wiring

ওয়্যারিং-এর শ্রেণিবিভাগ (Classification of wiring):
স্থাপনার প্রকার অনুযায়ী ওয়্যারিং তিন প্রকার
১। অভ্যন্তরীণ ওয়্যারিং
২। ওভারহেড ওয়্যারিং
৩। আন্ডার গ্রাইন্ড ওয়্যারিং।

ব্যবহার স্থানের প্রকার অনুযায়ী ওয়্যারিং চার প্রকার –
১। হাউজ ওয়্যারিং
২। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়্যারিং
৩। ফার্ম ওয়্যারিং
৪। ক্যারাভান ওয়্যারিং

ব্যবহৃত মালামাল ও কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী ওয়্যারিং নিম্নলিখিত কয়েক প্রকার হয়-
১। ক্লীট ওয়্যারিং 
২। কেসিং ওয়্যারিং বা চ্যানেল ওয়্যারিং
৩। ব্যাটেন ওয়্যারিং
৪। Conduit ওয়্যারিং
৫। ট্রাংকিং ওয়্যারিং 
৬। নব অ্যান্ড টিউব ওয়্যারিং
৭। আন্ডার প্লাস্টার ওয়্যারিং

ব্যবহৃত তার ও ক্যাবলের নাম অনুসারে ব্যাটেন ওয়্যারিংকে নিম্নলিখিত শ্রেণীতে ভাগ করা হয় –
(ক) পি.ভি.সি. ওয়্যারিং
(খ) টি আর এস ওয়্যারিং
(গ) সি টি এস ওয়্যারিং |
(ঘ) এম আই সি ওয়্যারিং
(ঙ) আর্মারড ক্যাবল ওয়্যারিং
(চ) মেটাল শীথড ওয়্যারিং

Conduit ওয়্যারিং আবার নিম্নলিখিত কয়েক প্রকারঃ
(ক) সারফেস Conduit ওয়্যারিং 
(খ) কনসিল্ড Conduit ওয়্যারিং
(গ) ফ্লেক্সিবল Conduit ওয়্যারিং

হাউজ ওয়্যারিং:
আবাসিক ভবন, হােটেল, রেস্টুরেন্ট, অফিস ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যে ওয়্যারিং করা হয়, তাকে হাউজ ওয়্যারিং বলে।
সাধারণত ব্যাটেন ওয়্যারিং, চ্যানেল ওয়্যারিং, কনসিন্ড Conduit ওয়্যারিং এবং আন্ডার প্লাস্টার ওয়্যারিং হাউজ ওয়্যারিং-এ ব্যবহার করা হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে সারফেস Conduit ওয়্যারিং এর ব্যবহারও দেখা যায়।

ব্যাটেন ওয়্যারিং:
দেয়ালের গায়ে কাঠের ব্যাটেন আটকিয়ে উক্ত ব্যাটেনের সাথে ক্লীপ দ্বারা তার আটকিয়ে যে ওয়্যারিং করা হয়, তাকে ব্যাটেন ওয়্যারিং বলা হয়। এখানে কাঠের তৈরি সুইচ বক্স, জংশন বক্স ও রাউন্ড রক ব্যবহার করা হয়।

ব্যাটেন ওয়্যারিং এর প্রয়ােজনীয় মালামাল-
১। আয়রন ক্লেড সুইচ অথবা সার্কিট ব্রেকার
২। ডিস্ট্রিবিউশন বাের্ড
৩। বাউন্ড ব্লক।
৪। ব্যাটেন (প্রয়ােজনীয় সাইজের)
৫। উড পিন / রাউল প্লাগ
৬। উড বেন্ড
৭। উড কর্নার
৮। লিংক ক্লীপ (প্রয়ােজনীয় সাইজের)
৯। উড Scrow (প্রয়ােজনীয় সাইজের)
১০। ১/২” পেরেক
১১। তার/ক্যাবল (প্রয়ােজনীয় সাইজ ও গ্রেডের)
১২। সুইচ বাের্ড
১৩। জয়েন্ট বক্স
১৪। কানেকটর
১৫। সিলিং রােজ
১৬। ব্যাটেন হােন্ডার
১৭। প্যান্ডেন্ট হােল্ডার
১৮। ব্র্যাকেট
১৯। ব্র্যাকেট হােল্ডার
২০। 5A সুইচ
২১। 5A সকেট টুপিন / থ্রিপিন
২২। 15A সকেট থ্রিপিন টাইপ
২৩। 15A সুইচ
২৪। ইন্ডিকেটর ল্যাম্প
২৫। ফিউজ

মালামালের সাইজ/রেটিং –
আয়রন ক্লেড সুইচ- বাজারে 15A, 30A, 60A, 100A, 20OA রেটিং-এর আয়রন ক্লেড সুইচ পাওয়া যায়। আয়রন ক্লেড সুইচ ডিপি অথবা টিপি হতে পারে।

ডিষ্ট্রিবিউশন বাের্ড- এটি একাধিক ফসফর ও ফিউজবিশিস্ট বক্স যার ভােল্টেজ রেটিং 50V হয়।
বাউন্ড রক- চাকতি আকারের কাঠের বক্স। সাধারণত ব্যাস ৩” হয়।
ব্যাটেন- গর্জন, গামারী অথবা চাম্বল জাতীয় শক্ত কাঠের কালি যার পুরুত্ব ও 1/2″ এবং চওড়া ১/২”, 1″,1×1/4″, 1×1/2″ ইত্যাদি মাপের হয়। প্রচলিত ২x৩০.০২৯ সাইজ তারের ক্ষেত্রে প্রতি তারের জন্য 1/4″ এবং অতিরিক্ত ১৪”” চওড়া হতে হয়।।

লিংক ক্লীপ (Link Clip)- পিতলের অথবা টিনের তৈরি ক্লীপ। বাজারে ১৫০, ২০০, ২৫০V সাইজের লিংক ক্লীপ পাওয়া যায়। এক তারের জন্য ১৫০, দুই তারের জন্য ২০০ এবং তিন তারের জন্য ২৫০ সাইজের লিংক ক্লীপ ব্যবহার করা হয়।
সুইচ বাের্ড- সুইচ বাের্ড কাঠের তৈরি বক্স সাধারণত 3″ x3″,4”x6″, 6”x৪”, এবং ৪” x12″, বাের্ড ব্যবাহর করা হয়।

ব্যাটেন ওয়্যারিং করার কার্যপদ্ধতি ও পদক্ষেপ-
১। ওয়্যারিং নকশা অনুযায়ী বিভিন্ন পয়েন্ট সুইচ বাের্ড, জংশন বক্স ইত্যাদির স্থান চিহ্নিত করা হয়।
২। যেসব স্থান দিয়ে তার যাবে ঐ স্থানে ব্যাটেন বসানাের জন্য Blue সুতারের সাহায্যে লাইন দাগ দিতে হয়।
৩। দেয়ালে বা ছাদে/লাইন দাগের উপর ৩০ সে.মি. দূরে দূরে উডপিন বা রাউল প্লাগ বসানাে হয়।
৪। প্রয়ােজনীয় সাইজ অনুযায়ী ব্যাটেন নিয়ে ৫ সে.মি. দূরে দূরে;১/২” বা ১.২৫ সেমি. পেরেক দিয়ে উপযুক্ত সাইজের লিংক ক্লিপ আটকানো হয়।
৫। দেড় ইঞ্চি বা ৩৮ সে.মি. উড স্কু দিয়ে উড পিনের সাথে বা রাউল প্লাগের সাথে রাউন্ড ব্লক এবং ব্যাটেন আটকানাে হয়।
৬। দেয়ালের কোণায় ব্যাটেনের সমান চওড়া উড কর্নার এবং ব্যাটেন লাইনের বাঁকে উড ব্যান্ড আটকানাে হয়।
৭। সুইচ বাের্ড এবং জংশন বক্সের কভার খুলে তলায় ছিদ্র করে বেস বা তলা নির্দিষ্ট স্থানে স্থাপন করে ছিদ্র বরাবর দেয়ালে চিহ্ন দিয়ে সেখানে উড পিন অথবা রাউল প্লাগ বসানাে হয়। এর পর দেড় ইঞ্চি বা ৩৮সে.মি. উড Scrow দিয়ে বাের্ডের বেস বা তলাকে দেয়ালে আটকে দেয়া হয়।
৮। রাউন্ড ব্লকের কভারে ছিদ্র করে সিলিং রােজ সকেট ব্যাটেন হােল্ডার ৩ ব্র্যাকেটের তারের প্রান্ত সংযােগ করার ব্যবস্থা করা হয়।
9. কভারের ছিদ্র দিয়ে তারের প্রান্ত ঢুকিয়ে সিলিং রােজ ব্যাটেন হােন্ডার, সকেট ও ব্র্যাকেট তার সংযােগ করা হয় এবং এগুলােকে রাউন্ডব্লকে আটকানাে হয়।
১০। লিংক ক্লীপের উপর তার বা ক্যাবল স্থাপন করে ক্লীপ বন্ধ করে ব্যাটেনের সাথে তার ক্যাবল আটকানাে হয়। এভাবে ধীরে ধীরে দূরবর্তী স্থান হতে জয়েন্ট বক্সের দিকে অথবা সুইচ বাের্ডের দিকে অগ্রসর হতে হয়।
১১। সারফেস টাইপ সুইচ হলে সুইচ বাের্ডের কভারে ছিদ্র করে তার ঢুকানাের ব্যবস্থা করা হয় আর ফ্লাশ টাইপ সুইচ হলে সুইচ বাের্ডের কভারে সুইচ বসানাে হয়।
১২। সুইচের টার্মিনালে তারের প্রান্ত সংযােগ করে বাের্ডের কভারে সুইচ বসিয়ে তারগুলােকে লিংক ক্লীপ দিয়ে ব্যাটেনের সাথে আটকিয়ে জয়েন্ট বক্সের দিকে তারগুলােকে অগ্রসর করানাে হয়।
১৩। চীনা মাটির অথবা প্লাস্টিকের কানেক্টর ব্যবহার করে অথবা সরাসরি প্রয়ােজনীয় জয়েন্ট সম্পন্ন করে জয়েন্ট বক্সে স্থাপন করে বক্সের কভার আটকে দেয়া হয়।
১৪। সার্ভিস সুইচ, ডিস্ট্রিবিউশন বক্স, সাব-ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ড নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়ে প্রয়ােজনীয় সংযােগ সম্পন্ন করা হয়।

ব্যাটেন ওয়্যারিং এর ব্যবহার: ব্যাটেন ওয়ারিং সাধারণ বাসগৃহে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এবং ধর্মীয় উপাসনালয়ে ব্যবহার করা হয়।

ব্যাটেন ওয়্যারিং এর সুবিধা ও অসুবিধাঃ
ব্যাটেন ওয়্যারিং এর সুবিধাঃ
১। ব্যাটেন ওয়্যারিং এর খরচ অপেক্ষাকৃত কম, স্থায়িত্ব মােটামুটি সন্তোষজনক। ২। ওয়্যারিং এর প্রয়ােজনীয় পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সম্প্রসারণ করা সহজ।
৩। ক্রটি মেরামত করা সহজ।
৪। সুন্দর ও নিখুঁতভাবে কাজ করা হলে ঘরের শােভা বর্ধন করে।

ব্যাটেন ওয়্যারিং এর অসুবিধাঃ
১। কভুইট ওয়্যারিং এবং ট্রাংকিং ওয়্যারিং এর তুলনায় স্থায়িত্ব কম।
২। তার ব্যাটেনের উপর খােলা অবস্থায় থাকে বলে শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাবনা থাকে।
৩। তারের ইসুলেশন দুর্বল হলে বৈদ্যুতিক শক এর সম্ভাবনা থাকে।

ওয়্যারিং-এর ব্যবহার (Uses of wiring):
(i) সাময়িক শেড (Temporary shed)- খুব অল্প সময়ের জন্য অস্থায়ী শেড-এ ওয়্যারিং করা হয়। ক্লিট ওয়্যারিং অস্থায়ী শেডে ব্যবহৃত হয়।
(ii) আবাসিক বিল্ডিং (Residential building)- সাধারণত আবাসিক বিল্ডিং-এ ব্যাটেন ওয়্যারিং ব্যবহৃত হয়। আর সৌখিন ও ব্যয়বহুল বাসগৃহে কনসিন্ড কভুইট ওয়্যারিং ব্যবহৃত হয়।
(iii) ওয়ার্কশপ (Workshop)- এই সমস্ত জায়গায় সাধারণত কনসিল্ড Conduit ওয়্যারিং ব্যবহৃত হয়।

বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং-এর পদক্ষেপ (Steps of electrical wiring):
নিম্নে বিভিন্ন পদ্ধতির ওয়্যারিং-এর কার্যপ্রণালি বর্ণনা করা হলােঃ

১।ব্যাটেন ওয়্যারিং (Batten Wiring):
(ক) এই ওয়্যারিং-এ সাধারণত 250v গ্রেডের পিভিসি টুইন-কোর তার ব্যবহার করা হয়। প্রয়ােজনে সিংগেল কোর তারও ব্যবহার করা হয়।
(খ) যে স্থানে ওয়্যারিং করতে হবে, ওয়্যারিং এর নকশা (সার্কিট ডায়াগ্রাম) অনুযায়ী রঙিন চক দিয়ে লাইন টানতে হয়।
(গ) সার্কিট ডায়াগ্রাম অনুযায়ী কাঠের ফালি (ব্যাটেন), কর্নার, রাউন্ড ব্লক, জয়েন্ট বক্স, সুইচবাের্ড ইত্যাদি প্রস্তুত বা বাছাই করতে হয়।
(ঘ) কাঠের ফালি (ব্যাটেন) বা অন্যান্য সামগ্রী বসাবার জন্যে ডায়াগ্রাম অনুযায়ী 60 সেন্টিমিটার বা দু’ ফুট অন্তর অন্তর কাঠের গুলি বা রাওল প্লাগের জন্যে দেয়াল ছিদ্র করতে হয়।
(ঙ) তারপর কাঠের গুলি বা রাওল প্লাগ ছিদ্রের মধ্যে বসাতে হয়।
(চ) এরপর কর্নার, রাউন্ড ব্লক, সুইচবাের্ড, জয়েন্ট বক্স, ইত্যাদি দেয়ালে স্কুর সাহায্যে দৃঢ়ভাবে আটকাতে হয়।
(ছ) প্রথমেই ব্যাটেনে লিংক ক্লিপ লাগাতে হয়। ব্যাটেনের দু’প্রান্ত হতে 5 সেমি (দু’ইঞ্চি) দূরে দুটি লিংক ক্লিপ নেইলের (১/২” তারকাটা) সাহায্যে লাগাতে হবে। মধ্যবর্তী লিংক ক্লিপের দূরত্ব হবে 12-14 সেমি.।
(জ) ব্যাটেনের উপর লিংক ক্লিপ স্থাপন করা শেষ হলে ব্যাটেনগুলাে দেয়ালে
স্ক্রু সাহায্যে লাগাতে হবে।
(ঝ) এখন ডায়াগ্রাম অনুযায়ী ব্যাটেনের উপর তার টানা ও দৃঢ়ভাবে বসিয়ে ক্লিপের সাহায্যে আটকাতে হবে।
(ঞ) ব্যাটেনের উপর তার বসানাে হলে ডায়াগ্রাম অনুযায়ী বিভিন্ন সরঞ্জামাদি (যেমন- সিলিং রােজ, সুইচ, সকেট, ইত্যাদি)। স্ক্রু সাহায্যে বসিয়ে বৈদ্যুতিক সংযােগ দিতে হবে।
(চ) সুইচবাের্ডের অবস্থান সবসময় মেঝে হতে 1.25 মিটার হতে 1.5 মিটার অর্থাৎ 4 ফুট হতে 5 ফুট উচ্চে এবং দরজার পার্শ্বেই হওয়া উচিত।

২। Conduit ওয়্যারিং (Conduit Wiring):
পাইপের (Conduit) মধ্য দিয়ে ইনসুলেটেড ক্যাবলের সাহায্যে যে ওয়্যারিং করা হয়, তাকেই Conduit ওয়্যারিং বলা হয়। এই Conduit যে-কোন আঘাত হতে ওয়্যারিংকে রক্ষা করে।
Conduit দু’ধরনের হয়, যথা-
(১) ধাতুর তৈরি- সাধারণত লােহার তৈরি পাইপ।
(২) অধাতুর তৈরি- পিভিসির তৈরি পাইপ।

বর্তমানে বাংলাদেশে পিভিসির তৈরি Conduit বহুল ব্যবহৃত হয়।

(ক) সারফেস Conduit ওয়্যারিং (Surface Conduit Wiring):
১। এই ধরনের ওয়্যারিং-এ Conduit-এর মধ্যে তার টানার আগেই Conduit বসাতে হয়। এতে তারের বা ক্যাবলের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা কম থাকে।
১। ডায়াগ্রাম অনুযায়ী Conduit মাপজোক দিয়ে কেটে নিতে হবে। কাটার পর Conduit প্রান্তভাগ অসমান থাকলে রেত (File) দিয়ে ঘষে সমান করতে হবে, না হলে তার টানার সময় তার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৩। Conduit এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদির প্রস্তুতির কাজ শেষ হলে সার্কিট ডায়াগ্রাম অনুযায়ী স্যাডেল, Scrow এবং কাঠের গুলি বা রাওল প্লাগের সাহায্যে সেগুলােকে বসাতে হবে।
৪। Conduit এর উপর স্যাডেলগুলাে সমদূরত্বে বসাতে হবে। প্রত্যেকটি সরঞ্জাম হতে 10-12 সেমি. দূরে এবং দু স্যাডেলের দূরত্ব 80-90 সেমি. হলে ভাল হয়।
৫। এরপর Conduit এর প্রান্তভাগে বিভিন্ন সারকুলার বক্স, জংশন বক্স এবং সুইচ বক্স বসাতে হবে।
৬। Conduit বসানাের কাজ শেষ হলে Conduit এর মধ্য দিয়ে তার টানা হয়। প্রথমেই একটি ইস্পাতের ফিতা, একটি কন্ডইট বক্স বা ড্র-ইন বক্স থেকে অন্য বক্সে নেয়া হয় এবং এর সাথে লাগিয়ে একটি ড্র বা টানা তার নেয়া হয়।
৭। টানা তারের অপর মাথায় ওয়্যারিং-এর তার বেঁধে টানা হয়। টানা তারে ওয়্যারিং-এর তার বাঁধার নিয়ম হল, ওয়্যারিং-এর তারের মাথা হতে 50 মিমি. ইনসুলেশন উঠিয়ে সবগুলাে তারকে একত্রে পাকিয়ে একটি রিং-এর মত করতে হয় এবং বাকি তার দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে দিতে হয়, যাতে টানার সময় রিং খুলে না যায়। পরে স্থানটি টেপ দিয়ে জড়ানাে হয়, যাতে তারের গােছার মুখটা সুচালাে হয়। টানার সময় পিছলা হওয়ার জন্যে তারের উপর ফ্রেঞ্চ চক পাউডার দেয়া হয়, যাতে তার সহজেই Conduit-এর ভিতর প্রবেশ করতে পারে।
৮। তার টানার সময় লক্ষ রাখতে হয়, যেন Conduit এর ভিতরে তার প্যাঁচ না খায়।

খ) কনসিল্ড Conduit ওয়্যারিং (Concealed Conduit Wiring):
বিন্ডিং-এর দেয়ালের মধ্যে খাজ বা চ্যানেল কেটে তাতে ইস্পাত বা পিভিসি Conduit বসিয়ে পরে প্লাস্টার করে Conduit ঢেকে দিয়ে যে ওয়্যারিং করা হয়, তাকে কনসিল্ড Conduit ওয়্যারিং বলে।
১। প্রথমেই দেয়ালে ছেনি (Cold chisel) দিয়ে খাজ বা চ্যানেল কেটে তাতে স্যাডেল (Saddle) দিয়ে Conduit দেয়ালে আটকাতে হবে। Conduit বসানাে হলে এর উপর প্লাস্টার দিয়ে খাজ ঢেকে দিতে হবে। খাঁজ এমন গভীর হতে হবে, যাতে Conduit-এর উপর 10 মিমি, প্লাস্টার থাকে। বিল্ডিং তৈরির সময় ছাদে সাটারিং-এর পর এবং কংক্রিট ঢালাই-এর আগেই নকশা অনুযায়ী Conduit বিছাতে হবে।
২। Conduit-এর কাজ শেষ হলে অন্যান্য সরঞ্জামাদি বসানাে, তার ঢুকাননা এবং অন্যান্য কাজ সারফেস Conduit ওয়্যারিং-এর মতই করতে হবে।

৩। কেসিং বা কেজিং ওয়্যারিং (Casing Wiring):
এই জাতীয় ওয়্যারিং বর্তমানে ব্যবহৃত হয় না। এ ধরনের ওয়্যারিংয়ের ঝামেলাও খুব বেশি এবং খরচও বেশি পড়ে। কেসিং ওয়্যারিং-এ ক্লিটের পরিবর্তে খাজকাটা কাঠের চেপ্টা অংশ ব্যবহার করা হয়। খাঁজের ভিতর তার রেখে এই ওয়্যারিং করা হয়। কাঠের খাঁজকাটা অংশগুলাে কাঠের ওপর Scrow দিয়ে এঁটে দেয়ালে লাগানাে হয় এবং পরে ঐ খাঁজকাটা কাঠের অংশের ওপর একটি কাঠের ঢাকনা (Capping) লাগিয়ে দেয়া হয়। তবে বর্তমানে প্লাস্টিক বা পিভি সি-র কেসিং ব্যবহৃত হচ্ছে যার নিয়মাবলি এই কেসিং-এর মতই।

কেসিং বা কেজি ওয়্যারিং-এর ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত নিয়মাবলি মেনে চলতে হয়ঃ

(ক) শুধু শুকনাে জায়গাতে এই ধরনের ওয়্যারিং করা যাবে।
(খ) কেসিংগুলাে 90 সেমি (3 ফুট) বা তার কম ব্যবধানে স্কু দিয়ে দেয়ালের সাথে লাগাতে হয়।
(গ) কেসিং লাগানাের সময় চীনামাটির চাকতি লাগিয়ে তাকে দেয়াল থেকে 3 মিলিমি উপরে রাখতে হবে।
(ঘ) কেসিং-এর উপর ঢাকনা লাগাবার সময় 15 সেমি (6) বা তার কম দূরত্বে ক্রু দিয়ে লাগাতে হবে।
(ঙ) প্রয়ােজন হলে একই খাজের ভিতরে একই পােলারিটির একাধিক ক্যাবল রাখা যেতে পারে। কিন্তু বিভিন্ন পােলারিটির ক্যাবল (যেমন- ফেজ ও নিউট্রাল বা দুটি ফেজ ইত্যাদি) একই খাঁজে রাখা যাবে না।

Conduit-এর মধ্য দিয়ে তার টানা পদ্ধতি (Drawing wires in conduit wiring steps):
তার টানা ও সংযােগ (Drawing wires and Connections): সকল Conduit, সুইচ বাের্ড, জংশন বক্স ডিস্ট্রিবিউশন বাের্ড আউটলেট বক্স ইত্যাদি বসানাের পর Conduit-এর ভিতর দিয়ে তার টানা হয়। তার টানার জন্য ফিসটেপ অথবা ড্র ওয়্যার ব্যবহার করা সুবিধাজনক। ফিস টেপের অভাবে জিআই তারও ব্যবহার করা যায়। দূরত্ব বেশি হলে অংশের পর অংশ করে তার টানা সুবিধাজনক, শেষ দিক হতে শুরুর দিকে ফিস টেপ ঢুকিয়ে এর মাথার আংটার সাথে তারের প্রান্ত বেঁধে টেনে তার টানা হয়। তারে কোন জয়েন্টের প্রয়ােজন হলে তা কোন আউটলেট বক্সে অথবা সুইচ বাের্ডে করা হয়। Conduit-এর ভিতরে তারের কোন জয়েন্ট থাকেত পারে না।
শেষ প্রান্তে প্রয়ােজনের চেয়ে ছয় ইঞ্চি তার বেশি রেখে সকল সংযােগ সম্পন্ন করা হয়।

ওয়্যারিং করতে যে যে বিষয়ের উপর নজর দিতে হবেঃ
(i) সুইচের পােলারিটি ঠিক থাকতে হবে।
(ii) সংযােগ যাতে ঢিলা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
(ii) সকল যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।
(iv) সাপ্লাই দেয়ার পূর্বে অবশ্যই ভালাে করে পরীক্ষা করে নিতে হবে।
(v) কাজ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন পজিটিভ ও নেগেটিভ তার একত্র না হয়ে যায়।

ওয়্যারিং এর জন্য প্রয়ােজনীয় মালামাল Necessity materials for wiring):
(i) সার্ভিস তার
(i) সার্ভিস পাইপ
(iii) সেফটি ডিভাইস
(iv) এরিয়াল ফিউজ এবং জি আই তার
(v) ক্রেড়াল গার্ড
(vi) শ্যাকল ইনসুরেটর ইত্যাদি।

সার্ভিস মেইন (Service main):
Distribution line হতে গ্রাহকের বাড়িতে ঢুকে প্রথমে তাদের মেইন ফিউজে বা কাট-আউটে আসে, পরে মিটারে যায়। Distribution line থেকে যে তার বা ক্যাবল দিয়ে বাড়িতে কারেন্ট আসে তাকে সার্ভিস মেইন বলে। এরপর থেকেই গ্রাহকের ওয়্যারিং আরম্ভ হয়।

সাব-মেইন ওয়্যারিং (Sub-main Wring):
যদি ডিস্ট্রিবিউশন বাের্ডের পরে সাব-ডিস্ট্রিবিউশন বাের্ড ব্যবহার করা হয়, তবে ডিস্ট্রিবিউশন বাের্ড হতে সাব-ডিস্ট্রিবিউশন বাের্ড পর্যন্ত ওয়্যারিংকে সাব-মেইন ওয়্যারিং বলা হয়।

ফাইনাল সাব-সার্কিট (Final sub-circuit):
মেইন ডিস্ট্রিবিউশন বাের্ড থেকে যে-সব লাইন সাব-ডিস্ট্রিবিউশন বাের্ডে আসে, তাদেরকে সার্কিট হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। আর সাব-ডিস্ট্রিবিউশন ফিউজ বাের্ড থেকে যে-সব লাইন লােড পয়েন্টের দিকে যায়, তাদের প্রত্যেকটিকে এক একটি ফাইনাল সাব-সার্কিট বলা হয়। নিয়মানুযায়ী প্রতি ফাইনাল সাব-সার্কিটে বাতি, পাখা, সকেট ইত্যাদির জন্য ১০টি পয়েন্টে ৮০০ ওয়াটের বেশি এবং পাওয়ার সাব-সার্কিটে সর্বাধিক ২টি পয়েন্টে ৩,০০০ ওয়াটের বেশি ব্যবহার করা যাবে না।

অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থা (Internal electric distribution system):
বৈদ্যুতিক বিধি মােতাবেক বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, দোকানপাট প্রভৃতি স্থাপনাতে বিদ্যুতায়নের নিমিত্তে মিটার বাের্ড হতে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি যেমন- বাতি, পাখা ও অন্যান্য গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক সাজ-সরঞ্জামে নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তামূলক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে বিদ্যুৎশক্তি বণ্টনের নেটওয়ার্ক বা তারের বিন্যাসকে ওয়্যারিং বলে। বাসাবাড়ি বিদ্যুতায়নের এ ওয়্যারিংকে বলা হয় Domestic Electrical Installation. নিম্নচাপ বৈদ্যুতিক লাইন হতে সার্ভিস ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ গ্রাহকের আঙিনায় প্রবেশ করে। প্রথমে বিদ্যুৎ আসে বাড়ির প্রবেশমুখের পার্শ্বে স্থাপিত মিটার বাের্ডে। মিটার বাের্ডে স্থাপিত এনার্জি মিটার, মেইন সুইচ, মেইন ডিস্ট্রিবিউশন বাের্ডের মাধ্যমে বাড়ির ভিতরে স্থাপিত সাব-মেইন ডিস্ট্রিবিউশন বাের্ডে বিদা প্রবেশ করে। সাবমেইন ডিস্ট্রিবিউশন হতে সুইচ বাের্ড হয়ে বিদ্যুৎ লােড়ে যায়। এটাই অভ্যন্তরীণ বিদ্যুতায়নে বৈদ্যুতিক শক্তির বন্টন কর।

ডিট্রিবিউশন বাের্ড এবং সাব-ডিস্ট্রিবিউশন বাের্ড (Distribution board and sub-distribution board):
ডিস্ট্রিবিউশন বাের্ড ও মিটার বাের্ড হতে গ্রাহকের মেইন সুইচ পর্যন্ত দূরত্বকে ডিস্ট্রিবিউশন বাের্ড বলা হয়। সাব-ডিস্ট্রিবিউশন বোের্ড মেইন ডিস্ট্রিবিউশনের পর যে বাের্ড ব্যবহার করা হয়, তাকে সাব-ডিস্ট্রিবিউশন বাের্ড বলে।

লে-আউটের প্রয়ােজনীয়তা (Necessity of layout):NOTS-EH-layoutকোনাে একটি কাজ করার পূর্বে সেই কাজটির পরিকল্পনা করা খুবই প্রয়ােজন। আর সুষ্ঠভাবে কাজ করতে গেলে পরিকল্পনার বিক নেই। তেমনই লে-আউট ছাড়া যদি বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং-এর কাজ শুরু করা হয়, তবে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় ভাবতে হবে কোন সরঞ্জামটিকে কোথায় স্থাপন করতে হবে, কোন জায়গা থেকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ইত্যাদি। এর জন্য সময় নষ্ট হয় এবং ওয়্যারিংটি সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে। অতএব, ওয়্যারিং-এর ক্ষেত্রে আকাঙিক্ষত ফল লাভ করতে হলে ওয়্যারিংয়ের লে-আউট একান্ত প্রয়ােজন।

উপরের বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং এবং হাউজ ওয়্যারিং বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা (Detailed of electrical house wiring) পোষ্টটির মাধ্যমে  আপনি বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং বা হাউজ ওয়্যারিং বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে পারছেন। আশা করি নিজেই ওয়্যারিং করতে পারবেন। পরবর্তীতে প্রতিটি ওয়্যারিং নিয়ে আলাদা আলাদা আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ্।

 

আরো পড়তে ক্লিক করুন-ইলেকট্রিক্যাল ক্যাবল ও তার নিয়ে সহজ ভাবে আলোচনা (what is wires and cable)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!