Job News
গর্ভধারণ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যত্ন সমূহ (Pre- and post-pregnancy care)
গর্ভধারণ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যত্ন সমূহ (Pre- and post-pregnancy care)

গর্ভধারণ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যত্ন সমূহ (Pre- and post-pregnancy care)

গর্ভধারণ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যত্ন সমূহ (Pre- and post-pregnancy care): আজ আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো, যে বিষয়ে সকলকেই জানা উচিত। তো চলুন শুরু করা যাক- গর্ভধারণ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যত্ন সমূহ (Pre- and post-pregnancy care)

প্রাকৃতিক গর্ভধারণ সম্পর্কে ধারনা (Concept of Natural Conception):

প্রাকৃতিক গর্ভধারণ তখনই হয় যখন ইন্টারকোর্স বা শারীরিক মিলনের সময় ইজ্যাকুলেশন বা বীর্য স্খলনের মাধ্যমে শুক্রাণু ভ্যাজাইনাতে (যোনীপথে) প্রবেশ করে এবং ফেলোপিয়ন টিউবে যেয়ে ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে, যা পরবর্তিতে জরায়ুতে প্রতিস্থাপিত হয়ে গর্ভধারন সম্পন্ন হয়। এই কনসেপশন নির্ভর করে ওভ্যুলেশনের উপর। মাসের নির্দিষ্ট সময়ে ডিম্বাণু যখন বের হয়ে আসে, তখন কার্যকর শুক্রাণুর পক্ষেই সম্ভব একে নিষিক্ত করা।  প্রাকৃতিক গর্ভধারন এক এক দম্পতির জন্য এক এক সময় হতে পারে। কেউ বিয়ের প্রথম ইন্টারকোর্সেই গর্ভধারন করতে পারেন, কারো আবার সময় লাগতে পারে। যেহেতু ওভুলেশন পিরিয়ডের (মাসিক) সাথে সম্পর্কিত এবং বছরে মেয়েদের পিরিয়ড হয় সীমিত, অনেকের সময় লাগে। অনেক ক্ষেত্রে শুক্রাণু দূর্বল হতে পারে, যা প্রাকৃতিক গর্ভধারণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে যেকোনো ফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট শুরু করার আগে অন্তত ৬ মাস প্রাকৃতিক উপায়ে চেষ্টা করা উচিত। 

ওভ্যুলেশন সম্পর্কে ধারনা (Concept of Ovulation):

ডিম্বাশয় থেকে ডিম ফুটে বের হওয়ার প্রক্রিয়াকে ওভুলেশন (Ovulation) বলে। মায়ের শরীরে সাধারণতঃ প্রতিমাসে একটি করে ডিম ফুটে এবং নিষিক্ত হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করে। নিষিক্ত না হলে মাসিক হয়ে যায়। আর নিষিক্ত হলে (অর্থাৎ গর্ভকালীন সময়ে) পরবর্তী ডিম ফুটা বা ওভুলেশন বন্ধ হয়ে যায় । মেয়েদের রেগুলার মিন্সট্রয়েশন পিরিয়ড সাধারণত ২৮ থেকে ৩২ দিনের হয়ে থাকে।  যদি মেন্সট্রæয়াল সাইকেল ২৮ দিনের হয় অর্থাৎ ২৮ দিন পর পর হয় তাহলে পরের পিরিয়ড শুরুর ১৪+/-২ দিন আগে(১২-১৬তম) দিনে ওভ্যুলেশন হবে। ওভ্যুলেশন হলে কিছু শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। যেটা থেকে ওভ্যুলেশন হচ্ছে কিনা বোঝা যায়। যেমন:

১। শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বর্ধিত অবস্থায় থাকবে।  

২। মেয়েদের সার্ভিক্যাল মিউকাস বা সাদা স্রাব এর ধরন পরিবর্তিত হয় ওভ্যুলেশনের সময়। যতই ওভ্যুলেশনের কাছাকাছি সময় আসবে, এই মিউকাস ততই ভেজাভেজা, পিচ্ছিল কিছুটা স্বচ্ছ ঘন (ডিমের সাদা অংশের মতো) আকার ধারণ করতে থাকবে। (অনেকের ধারণা সাদা স্রাব যাওয়া খারাপ কিন্তু এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক)

গর্ভধারণ পূর্ববর্তী সতর্কতা স্বাস্থ্য পরামর্শ:

সুস্থ প্রেগন্যান্সীর জন্য সুস্থতা অপরিহার্য- প্রাকৃতিক উপায়ে গর্ভধারণ অনেকাংশেই নির্ভর করে শারীরিক সুস্থতার উপর। বাবা মায়ের শারীরিক সুস্থতা জরুরী। ওজন মাত্রাতিরিক্ত কম হওয়া কিংবা বেশি হওয়া দুইই ক্ষতিকর, কেননা এটা ফার্টিলিটির উপর প্রভাব ফেলে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস সহ যেকোন ক্রনিক ডিজিজও এর অন্তরায় হতে পারে। এই সুস্থতা বজায় রাখার জন্য ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ বার এক্সারসাইজ করা প্রয়োজন। এক্সারসাইজ আমাদের ফুসফুসের কর্মদক্ষতা বাড়ায়, মাংসপেশি মজবুত করে, অতিরিক্ত চর্বি গলিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। শারীরিক সুস্থতা প্রাকৃতিক গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।

অস্বাস্থ্যকর অপুষ্টিকর খাবার পরিহার- যে কোন অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস কিংবা জীবনাচরণ, যা ফার্টিলিটি কমিয়ে দেয়, সেগুলোকে জীবন থেকে সরিয়ে ফেলতে চেষ্টা করুন। ধূমপান, মদ্যপান, ড্রাগস, মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন ফার্টিলিটির ক্ষতিকর। অস্বাস্থ্যকর খাবার, ভাজা-পোড়া খাবার, অধিক চর্বিযুক্ত খাবার, জাংক খাবার (ফাস্টফুড) থেকে সরে বেশি বেশি শাক-সবজি ও ফলমূলসহ পুষ্টিকর খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

ডাক্তারের পরামর্শ– ডাক্তারের কাছে প্রি-কন্সেপশন চেক আপের জন্য যেতে পারেন। যেকোন সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ (যৌনরোগ) টিউবাল ফ্যক্টর ইনফার্টিলিটি (ফেলোপিয়ন টিউবের ক্ষতিগ্রস্থতার কারনে গর্ভধারনে সমস্য হওয়া) বাড়াতে পারে।   

ওষুধ সেবনে সতর্কতা- অনেক ওষুধ থাকে যা হয়ত আপনি খাচ্ছেন, যেগুলো কনসেপশনে বাধা দেয়, এমনকি প্রেগন্যান্সিতে চালিয়ে যাওয়া ক্ষতিকর। তাই যদি আগে থেকে যদি কোন ওষুধ খেতে থাকেন, প্রাকৃতিক উপায়ে গর্ভধারণ করতে চাইলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন।

অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস কিংবা জীবনাচরণ পরিহার- অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস কিংবা জীবনাচরণ যেমনঃ কম ঘুমানো, এক্সারসাইজ না করা, পারিবারিক কিংবা কর্মক্ষেত্রের অতিরিক্ত চাপ, ক্ষতিকারক ক্যামিকেলের ব্যবহার ইত্যাদি প্রাকৃতিক গর্ভধারণ প্রতিহত করে। রাত জাগার কারনে ঠিকমতো ঘুম হয় না অনেকের, যাতে শরীরের এড্রেনালিন, করটিসল হরমোন ঠিকমতো কাজ করে না, ইনসুলিন ভারসাম্যপূর্ণ থাকে না। এগুলো কনসেপশনকে কঠিন করে ফেলে। নিয়মিত ঘুম জরুরী।

প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহারে সতর্কতা- বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত পরিষ্কারক ক্যামিকেল, এমনকি সৌন্দর্য্যবর্ধনে ব্যবহৃত প্রসাধন সামগ্রীতে যে ক্যামিকেল ব্যবহার হয়, এর অনেকগুলোই ক্ষতিকর। যে কোন কৃত্রিম ক্যামিকেলের ব্যবহার কমিয়ে প্রাকৃতিক পণ্য ব্যবহারে সচেষ্ট হওয়া উচিত।

জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি বন্ধ করা- প্রাকৃতিক গর্ভধারণ চাইলে, প্ল্যান করার সাথে সাথেই জন্ম নিয়ন্ত্রণের যে পদ্ধতি অবলম্বন করছিলেন, তা বন্ধ করুন। বিশেষ করে খাবার পিল বা ইনজেকশন অনেকটাই হরমোনের সাথে জড়িত। সাধারনত এই ধরনের জিনিস বন্ধ করার পর পিরিয়ডের কয়েকটা সাইকেল লেগে যায় ওভ্যুলেশন নিয়মিত হতে, যা প্রেগন্যান্সির জন্য জরুরী। যেহেতু অনেকের ক্ষেত্রে ওভ্যুলেশন ট্র্যাক করা সহজ নয় (অনিয়মিত পিরিয়ডের ক্ষেত্রে), আপনাকে মাথায় রাখতে হবে পরবর্তী পিরিয়ডের আগেই কন্সেপশন দরকার। তাই সময় হাতে রেখে  আগে থেকেই বার্থ কন্ট্রোল থেকে সরে আসুন। তবে, বন্ধ করার আগে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন এবং গর্ভধারণের ব্যাপারে আলাপ করুন। এক্ষেত্রে জেনে রাখা দরকার অনেকে পিরিয়ড নিয়মিত হওয়ার জন্য বা জরায়ুর কোন সমস্যার জন্য ওষুধ/পিল খান। এসব গর্ভধারণে বাধা দেয়।

ওভ্যুলেশন সময় ট্র্যাক করা- যেহেতু ওভ্যুলেশনের সময়টাতেই গর্ভধারণের ব্যাপারটা ঘটে, তাই যারা কনসিভ করতে চাইছেন, তাদেও জন্য এই সময়টা খুঁজে বের করা খুব জরুরী এবং এই সময়কে মাথায় রেখে শারীরিক সম্পর্কের সময় ঠিক করা উচিত। যাদের পিরিয়ড রেগুলার (২৮-৩২ দিনের), তাদের জন্য উর্বর সময় (ফার্টিলিটি উইন্ডো) ট্র্যাক করা সহজ। ওভ্যুলেশন সাধারনত সাইকেলের ১১ এবং ২১ তম দিনের মধ্যে ঘটে থাকে। সহবাসের পরও স্পার্ম সাধারনত শরীরের ভেতরে প্রবেশের ২/৩ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এই অপেক্ষমাণ শুক্রাণু সহজেই ডিম্বাণু পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম। মনে রাখবেন, ডিম্বাণু বের হওয়ার পর ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টা টিকে থাকে। এই সময়ের মধ্যে যদি শুক্রাণু থেকে থাকে, তাহলেই নিষিক্তকরনের ঘটনা ঘটবে। ওভ্যুলেশনের আগেই সহবাস একটা উপায় হতে পারে। এতে ডিম্বাণু বের হওয়ার সাথে সাথে শুক্রাণু প্রস্তুত থাকবে।

স্ট্রেস মুক্ত থাকার চেষ্টা করা- মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের সাথে ওভ্যুলেশনের সংযোগ আছে। অনেকেই বাচ্চা হওয়া নিয়ে পারিবারিক প্রেশারে মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন। কিন্তু যত বেশি স্ট্রেস, তত তা আপনার শরীরের উপর প্রভাব ফেলবে।  যত বেশি চাপ মুক্ত থাকতে পারবেন, তত কনসেপশনের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। তবে আমরা যত রকম চেষ্টাই করি না কেন, কনসেপশনের গোটা ব্যাপারটাই সৃষ্টিকর্তার হাতে। হতাশ হবেন না। তাঁর প্রতি বিশ্বাস রাখুন, আর স্ট্রেস হতে পারে, এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এড়িয়ে চলুন।

তো আজ এই পর্যন্ত আগামীতে কথা হবে অন্য কোন প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে।গর্ভধারণ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যত্ন সমূহ (Pre- and post-pregnancy care)

পরবর্তী লেখা পড়তে ক্লিক করুন-গর্ভধারণের ১০ টি প্রাথমিক লক্ষণ (10 primary symptoms of Pregnancy)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!